Prashantada-17

প্রশান্তদা :

রাজা তোর কাপড় কৈ ?

নেব্রাস্কার মাঝরাতে প্রশান্তদা ফোন করলেই বুঝি বার্বান একটু বেশি চড়িয়েছেন !

কাল মাঝরাতে ফোন । তখন কলকাতায় মুষলধারে বৃষ্টি ! এমন দিনে তাঁর ফোন ।

"কি রে মগনলাল বাটরা কি শুরু করেছে ?"

"না না তুমি কি বলছো , মগনলাল হলো ফেলুদার খল নায়ক, কাল্পনিক চরিত্র , এ মালটা আসল , এর নাম দীননাথ , একেবারে দরিদ্র নারায়ণ !"

"তা ইনি আবার উর্দুর পেছনে লাগতে গেলেন কেন ?"

"কেন? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর তো বলেছিলেন উর্দু হাটাও , ভুলে গেছো আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রূয়ারি ! উর্দু চাপানো নিয়েই তো যত কিস্সা , তাই না ?"

"তুই কি বলছিস? সেটাতো বাঙালিদের ওপর উর্দু চাপানো ! এটা তো উর্দু ভাষীদের পিতৃভাষা ভুলিয়ে দেবার প্রয়াস , তাই না ?"

"নাস্তালিক অক্ষরে কেউ উর্দু পড়ছে না, উর্দুর অবস্থা এখন সংস্কৃতের মতো! একজন উর্দু কবি দুঃখ করে লিখেছেন , আমার উইলটা উর্দুতে লেখা মরে গেলে ছেলেটা যদি পড়তে পারে তবে আল্লাহ মহীমাময় !" গান্ধীজি বলেছিলেন দেবনাগরিতে উর্দু লিখলে তবু ভাষাটা বাঁচতে পারে ! তবে দীননাথ লোকটা বোধ হয় যৌবনে কবিতা লিখত , আর প্রকাশকরা ছাপেনি , তাই কবিদের উপর খাপ্পা , বলছে রবীন্দ্রনাথজি কে চায় না , মির্জা ঘালিবকেও চায় না ! রবীন্দ্রনাথজি তো আর উর্দুতে কবিতা লেখেন নি ! আর তাঁর কবিতা আর গান নিষিদ্ধ করলে তো সাংবিধানিক সংকট হবে, জাতীয় সংগীত তো আর দীননাথজির কোনো মনোনীত সভাকবি লেখেন নি ! তার জাগায় কি আসবে ? রামধন না হনূমান চালিসা ? আর গালিব তো উনি পড়েন নি মনে হয়. আমি তো চুটিয়ে গালিব পড়ছি , এই কবিতাটা শোনো , " গালিব খুদার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে , আর সে স্পর্শ করবে না শরাব , তবে কি, যখন চাঁদ ওঠে আকাশে, কিংবা গগনে ডাকে দেয়া , তখন প্রতিজ্ঞা ভেঙে গালিব এক দু পাত্র পান করে !"

"তাহলে তো খুব বিপদ, দেশ রসাতলে যাবে, রবীন্দ্রনাথের উপর আক্রমণ তারপর মাছ নিষিদ্ধ করার চক্রান্ত , আমার তো রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে !"

"তুমি মাথা ঠান্ডা করো ! আর একটা বড়ো জ্যাক ড্যানিয়েলস ঢালো ! যাদের কোনো কাজ নেই তারা নতুন নতুন খৈ ভাজছে রোজ, আজ মাছ, কাল রবীন্দ্রনাথ, পরশু আওরংজেব!

একটা শিশু যেমন বলেছিলো ," রাজা তোর কাপড় কৈ , তেমনি দীননাথকে গিয়ে জিগ্যেস করতে হবে:,"তুই কে রে হরিদাস হিন্দু ইমাম, ফালতু ফতোয়া জারি করছিস ?তুই কি প্রধানমন্ত্রীর ভাইপো ?"

"হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর ভাইপো কেন ?"

"ও বাবা তাও জানো না ,এখন তো ভাই পোদের জয় জয়কার গো ! যে নেপো দই মারে সেই তো ভাইপো! তাই ভাইপোতন্ত্রর ইংরেজি হলো গিয়ে নেপোটিজম! তবে নাতিরাও পিছিয়ে নেই , ইন্দিরার নাতি, সুভাষবাবুর এক ডজন নাতিবৃন্দ , আম্বেদকরের নাতি , মহাত্মা গান্ধীর নাতি -এবং বাবালোকদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম !"

"বাটরা বাবাজি ভেবেছে কি , এটা কি মগের মুলুক নাকি ?'

"মগের মুলুক , এক্সকিউজ মি , প্রশান্তদা আপনি কি ক্যালকাটা ক্লাবের মনু চ্যাটার্জীর কথা বলছেন ? মহাপুরুষের বিখ্যাত ডায়ালগ ! সরি, মানে মহারাষ্ট্র বলছেন ?"

"না না আমার বাঙালিয়ানা , আমার দেশপ্রেম জেগে উঠেছে , দীননাথকে আমি শুলে ছড়িয়ে ছাড়বো ?"

"আরে দাদা শিক্ষা যদিও সংবিধানের কংকাররেন্ট তালিকায়, ক্ষমতা আসলে রাজ্যের হাতে ! কে একটা লোক বলে দিলো মুন্সী প্রেমচাঁদ চাই না আর অমনি আমরা রেগে ভূত ! দীননাথ তো মুচকি মুচকি হাসছে ! কাল অবধি কেউ ওর নাম শোনে নি আর আজ সবাই ওকে নিয়ে চর্চা করছে যেন ও প্রকাশ জাপটেধর এবং পার্থ চাটুজ্জে -দুজনেরই বস ? ওকে গিয়ে একটা শিশু জিগেস করুক , "দরিদ্র নারায়ণ তোর ধুতি কৈ ?"

আর শোনো তোমাকে একটা উর্দু শায়ারি শোনাই কবি হলেন ফিরাক গোরাখপুড়ি ! মূল উর্দু হলো " আই শেখ , গর্ আসর হয় দুআ মে , তো মসজিদ হিলা কে দিখা , গর্ নাহী তো দো ঘুঁট পি , অর মসজিদ কো হিলটা দেখ !" বাংলা না করলেও চলতো তবু করছি : " ও ভাই ঈমাম , তোমার প্রার্থনার শক্তি দেখি, দেখি কেমন তুমি মসজিদ হেলাতে পারো , আর না হলে এসো ---দু পাত্তর চড়াই , আর দেখি মসজিদ কেমন টলোমলো করে !" এমন মধুর ভাষা , এমন অপূর্ব শায়ারি , কোনো ব্রাদার ইন ল নিষিদ্ধ করতে পারবে না !"