Prasanta Ubacho : Gnyaratantra

প্রশান্তদা উবাচ : গ্যাঁড়াতন্ত্র

তখন সবে হরিসাহেবের বিয়ে, তাই নিয়ে মেতে আছি , হাজার হোক রাজার দেশের বিয়ে বলে কথা ! এমন সময় নেব্রাস্কা থেকে টেলিফোন , " কি হলোরে , মোটাভাই কুপকাৎ ? রাহুলের এলেম আছে বল , আর পাপপুণ্য বলা চলবে না, পাপপু ক্যান ডান্স শালা ! পুরো বুদ্ধিটা দিদির , আমাকে মদনদা বলেছে !"

"সাফল্যের পিতা মাতা পিসিমনি মাসীমণি অনেক , ব্যর্থতা সদাই অনাথবৎ ! এবার কুম্ভকর্ণ পুত্র রাজা হবেন , সিদ্ধ রামাইয়ার অর্ধ চন্দ্র !"

"তুই সিদ্ধ রামাইয়ার মতো বিদঘুটে নাম কোথা থেকে পেলি রে ?"

" ইহা আনন্দবাজার ঘরানার, সম্ভবতঃ অভীকবাবুর মস্তিষ্ক প্রসূত ! দেখবে ওরা লেখে গাঁধি , কদাপি গান্ধী না, মানকাড লেখে না, লেখে মাঁকড় , রাজ্যপালকে ডাকছে বজুভাই বালা বলে , ভিরাট কোহলিকে বলে বিরাট কোহালি , তাই সিদ্ধপুরুষকে "কি নাম ডাকিলে তবে হৃদাকাশে উদয় হবে"?

"রাহুলজীর এটা সুনিপুন চাল, মোটাভাই একেবারে কিস্তি মাৎ !"

"এবার তো কর্ণাটকের নাটক শুরু , মন্ত্রীত্ব , ক্ষমতা , মধুভান্ডের ভাগ বাটোয়ারা, এইতো সবে কলির সন্ধ্যে গুরু !"

" আমার মনে হয় ওই টেপগুলো সুপ্রিম কোর্টে পেশ করে কপিল সিবাল তুলকালাম করবে! ‘ইয়েদুরাপ্পার অডিও’ ফাঁস, এবার ভাজপার হবে বাঁশ!"

"কপিল আর কয়েক মাস সুপ্রিম কোর্ট মুখো হবে না , ইম্পিচমেন্ট নিয়ে যাকে বলে "সেই তো মল খসালি , তবে কেন লোক হাসালি ?" ওদের মধ্যে ধূর্ত আইনজ্ঞ হলেন মনু , তিনি বলেছেন আমি ওসব অডিও খাঁটি কিনা যাচাই করে দেখিনি! হয়তো জানে জালি করেছে ! কংগ্রেস যদি আদালতে না যায় তাহলে প্রমান হবে পুরো ব্যাপারটাই ভুয়ো !'

" অশ্ব কেনা বেচা তো বেআইনি , তার জন্যে অমিত শাহের হাজতবাস হওয়া উচিত , তাই না ?"

" নিশ্চয় , প্রমান করতে পারলে আলবাত! মৃতদেহ না পেলে খুনের মামলা টিকবে না ! কুমারস্বামী ক্যামেরার সামনে তো বলছেন, " যদি আমাদের তিনজন বিধায়ককে ভাজপা ভাগিয়ে নেয় ,তাহলে আমি ওদের ছয়জনকে দলত্যাগ করাতে পারি! সবাই মুখে মারিতং জগৎ ! হুমকিতে ফাঁসি হওয়া মুশকিল!"

"আর জয় পশ্চিমবঙ্গ , শুনলাম দিদি ঝেঁটিয়ে জিতেছে ?"

" একেবারে ! এ নতুন ধাঁচের গণতন্ত্র ! মার্কস বলেছিলেন সাম্যবাদের শেষ পর্যায় রাষ্ট্র আর থাকবে না, ক্ষয় হতে হতে বিলীন হয়ে যাবে ! আমরা গণতন্ত্রের শেষ স্তরে এসে গেছি ! বিরোধীরা ক্ষয় হতে হতে, ম্লান হতে হতে, শুষ্ক, ক্ষীণ , বিবর্ণ হয়ে বিলীন হয়ে যাবে ! এই গ্যাঁড়াতন্ত্রের মূল মন্ত্র হলো : আমি গ্যাঁড়াচ্ছি, তুমি গ্যাঁড়াচ্ছ , সবাই গ্যাঁড়াচ্ছে , বিশ্বব্রহ্মাণ্ড গ্যাঁড়াচ্ছে ! লাঠির আরেক নাম উন্নয়ন, বোমার আরেক নাম বিকাশ , বন্দুকের নল হলো গ্যাঁড়াতান্ত্রিক ক্ষমতার উৎস , ঢাকের মধুর শব্দ হলো চরাম চরাম ! কবি গুরুর অনুপ্রেরণায় কবি ভীতব্রত লিখেছেন :

"আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো, GUN দিয়ে দ্বার খোলাব॥

ক্যালাবো যে লাঠির মারে , ফাটবে বোমা বারে বারে –

পেটো দিয়ে মালা করে গলায় তোমার দোলাব।

জানবে না কেউ উন্নয়নে ভোটাররা কী বাঁচবে প্রাণে?

কেষ্ট বাঁশির অলখ টানে ঘাসফুলে ঢেউ তোলাব॥"

আর হনুব্রত বলে আর একজন কবি আছেন , তিনি আবার মৌন্যব্রত অবলম্বন করতে অপারগ , তিনি লিখেছেন ," শঙ্খ আবার কে , আসতে কাটছে , যেতে কাটছে , বিদ্দ্বজন থেকে বুদ্ধিজীবী হবার চেষ্টা করছে , ও পচা শামুকে পা কাটিলে নির্ঘাত গ্যাংগ্রিন ! হনুবাবু লিখেছেন :

তুমি কেমন করে গুল ঝাড়ো,হে গুণী,

আমি অবাক্‌ হয়ে শুনি কেবল শুনি॥

বোমার আওয়াজ ভুবন ফেলে ছেয়ে,

গুলির শব্দ চলে বাতাস বেয়ে,

শঙ্খ ভুলে ভোটের অঙ্ক গুণী !

ভাবি মনে দেব আড়ং ধোলাই ,

হাতের কাছে ডাণ্ডা নাহি পাই।

করতে কী চাই, বলতে আমার বাধে–

ভোটে জিতেও পরান আমার কাঁদে।

আমায় তুমি ফেলছো আইনী ফাঁদে

হাজতের ভয় দিবা রাত্র শুনি !

তুমি কেমন করে গুল ঝাড়ো,হে গুণী!

প্রশান্তদা বললেন ,"তোর লজ্জা করছে না রবি ঠাকুরের গান নিয়ে প্যারোডি করছিস ?"

"পোশান্তদা , স্কুলের পরেই তুমি নেব্রাস্কা গিয়েছিলে তো , তাই বাংলা সাহিত্য পড়ার সুযোগ হয় নি ! তুমি চিরকুমার সভার "কত কাল রবে বল’ ভারত রে শুধু ডাল ভাত জল পথ্য ক’রে" শুনেছ ? একটি স্বদেশী গানের প্যারোডি ! মূল গানটি ছিল গোবিন্দচন্দ্র রায়ের ‘কত কাল পরে, বলো ভারত রে, দুখসাগর সাঁতরি পার হবে’ সেই গানটিও আবার ওয়াজেদ আলী শাহর "যাব ছোড চলে লখনৌ নগরীর"আদলে ! গোবিন্দচন্দ্র পরজীবী বাঙালি জাতিকে নিয়ে বিলাপ করেছেন; আর রবীন্দ্রনাথ সেই পরজীবীদের করেছেন ব্যঙ্গ। রবীন্দ্রনাথের উর্বশী কবিতাটির প্যারডি করেছিলেন ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত ! নাম সর্বশী (একটি বোকা পাঁঠী) ! দ্বিজেন্দ্রলালকেও ছাড়েন নি । লিখেছিলেন ‘মদ্য আমার, পানীয় আমার, শরাব আমার, আমার পেগ’! আমার প্যারোডির উৎকর্ষতা নিয়ে সমালোচনা হতে পারে ! তবে ভেবে দেখো ভীতব্রত কিংবা হনুব্রতর কলমে মাইকেল কিংবা নজরুল ভর করবেন কি ? আই রেস্ট মাই কেস !"