প্রশান্তদা উবাচ-8
এবার ফোন এলো, প্রশান্তদাই। তবে নেব্রাস্কা থেকে নয় !
"নোলা থেকে বলছি রে ?"
"তুমি কবে কলকাতা এলে ? "...
"না রে সে নোলা নয়, আমরা আমেরিকানরা নিউ অর্লিন্সকে আদর করে নোলা বলি !"
" তা তোমার গলা ভাঙা ভাঙা কেন ?"
"কালকে রাতে খুব জাম্বালায়া আর ক্রফিশ খেয়েছি তাই ।"
"সে কি বাঙালির চিংড়ি মাছ খেয়ে গলা ব্যথা ? বীরভূমের ছেলের একি হাল হকিকত হলো ?"
"তুই জানলি কি করে উহা চিংড়ি ?"
"ওরে বাওয়া , ক্যাফে দু মন্দ তো আমার পাড়ার চায়ের দোকানের মতো , প্রিজারভেশন হল তো ডোভার লেনের থেকেও পরিচিত ! তুমি কি আশির দশকে থমকে আছো হে ? নোলা বাঙালির কাছে পান্তা ভাত ! এখন বাঙালি যায় মাচচু পিচু , প্যাটাগোনিয়া , প্যাংগো প্যাংগো , গ্যালাপাগোস , নেব্রাস্কা কি আমেরিকার ঢেঙ্কানল নাকি ? তা গলাটা বসলো কি করে ? একটু বেনিয়ের সঙ্গে চিকরি মেশানো কফি পান করো ,নেশা না ছুটলেও খোঁয়াড়ি ভাঙবে !"
" একটা ফাস্টো কেলাস বার আছে নাম প্যাট ও ব্রায়ান , ডেরেকের কেউ নয় , হ্যারিকেন বুঝলি হ্যারিকেন , গলায় দিলে ব্রহ্মতালু থেকে জঠরে অগ্নুৎপাত হয় তার সঙ্গে ঝাল চিংড়ি ! গলা বসে গেলো ।
তোদের গেরুয়া বেশধারী পাগলা সাধুবাবা নাকি নার্সারি থেকে ইংরেজি পড়াবে ? ম্যাকাউলের ভূত কি ওনার ত্রিশূলে ভর করলো নাকি ?"
" আর তোমাদের গেরুয়া কেশধারী অসাধুবাবা চীনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে কি ? নাকি ওদেশেও শিল্পের হারিকেনায়ন চলছে?"
"প্রথমত তোরা কোনো খবর রাখিস না । তিনি সিরিয়ায় টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ঝেড়ে এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছেন ! পুতিনের লেজে আগুন দিয়েছেন , এবার যা হনুমান , স্বর্ণ দামাস্কাস পোড়া !
হুঁ হুঁ বাবা আর বলবি রাশিয়ার দালাল ?
এই তো আমাকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ডেকেছিলো -বললুম ট্রাম্প সাহেব তো তোমাদের কাছে ঈশ্বরের দান গো , তোমাদের তপস্যার ফল ! শুনে চীনারা দাঁড়িয়ে উঠে হাততালি দিলো যাকে বলে স্ট্যান্ডিং ওভেশন ! যাবার সময় দশ বোতল মাও তাই উপঢৌকন দিলো।"
"তাহলে তো আর কেউ ফোনে আড়ি পাতবে না?"
" আরে গত সপ্তাহে ওনার জামাইয়ের মাসতুতো ভাই, খুব পাওয়ারফুল , ফোন করে বললেন সান্টা , তোমার ট্রাম্পনোমিক্স নিয়ে সাম্প্রতিক লেখা আমরা পড়েছি , অতি প্রাঞ্জল এবং প্রজ্ঞা প্রোথিত , তোমাকে আমরা শীঘ্রই নৈশভোজে ডাকবো , জানোই তো আমাদের নেতা হিন্দু এবং ভারতীয়দের খুব ভালোবাসেন।"
"ভালোই হলো , আগে যেমন রজনী পাম দত্তর হাত ধরে বাঙালি বারিস্টাররা কমিউনিস্ট হতো, তুমি এবার আমেরিকা থেকেই গেরুয়া পার্টিতে যোগ দাও , তাতে আমেরিকাও "আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে" আর তুমিও গলা ছেড়ে বলবে জয় মা কালী কলকাত্তায়ালি ! কিংবা হনূমান জয়ন্তীতে জয় বজরংবলী !!!"
প্রশান্ত উবাচ-9
অগত্যা প্রশান্তদাকে ফোন করতে হলো !
এখনো উনি নোলায় বসে কেজুন আর ক্রেওল রন্ধন প্রক্রিয়ার তফাৎ নিয়ে ফলিত গবেষণা করে যাচ্ছেন -রোজ রোজ নতুন রেস্তোরাঁয় !
..."কি রে কি হলো ?"
"আর বলো না প্রশান্ত দা , দেশের বিভিন্ন মুখ্যমন্ত্রীদের মাথার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে ! আমি রূপেনবাবুকে ফোন করেছিলাম , বললাম আপনি তো ভালুয়েশন ব্যাপারটা বোঝেন একটু তাত্বিক দিক থেকে বলবেন ? এমনিতেই তো রূপেণ রায় একটু অন্যরকম লোক , হঠাৎ রেগে গেলেন ! বললেন -ছি ছি দেশের এই অবস্থা , গরুর মাথা বাঁচাবার জন্য লোকে খুন খারাবি করছে আর তুমি জিজ্ঞেস করছো কামরাজ নাদার আর জ্যোতি বসুর মাথার দামের তফাৎ ? তোমার কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে উপেন ?"
তারপর যাদবপুরের দর্শন শাস্ত্রের একজনকে ফোন করলাম ," তিনি বললেন দাম মানে কি? মূল্য ? অস্কার ওয়াইল্ড বলে গেছেন যে মিচকে নৈরাশ্যবাদীরা সব কিছুর দাম জানেন কিন্তু মূল্য বোঝেন না ! তারপর ইন্ডিয়ানার অধ্যাপক অর্কদেব চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করবো ভাবলাম, উনি ডেরিভেটিভ নিয়ে একটা বই লিখেছেন তাতে শক্ত শক্ত অংক আছে , কিন্তু তাঁকে পেলাম না তাই তোমাকে !"
" ইন্ডিয়ানকে কি ফোন করলি?"
"ইন্ডিয়ান নয় ইন্ডিয়ানা, ব্লিউমিংটন ।"
"না না আমাকে ফোন করে ঠিক করেছিস , এটা বেসিয়ান গণিতের সঙ্গে পৌরাণিক অংকের সংমিশ্রন করতে হবে ! রূপেণ রায় বেসিয়ান তত্ত্বের কিসসু জানে না আর অর্ক তো কৌশিকের ছাত্র ও আবার পৌরাণিক অংক কর্নেল এ শিখবে কি করে? শোন, দক্ষিণ ভারতে ওরা কাকে পুজো করে -রাবন তাই না ? রাবনের কয়টা মাথা? দশ তাই না ? তাহলে পিঁড়ায় ভিজায়ানের মাথার দাম যদি এক কোটি হয় তাহলে পার ক্যাপিটা বা মাথাপিছু হলো দশ লাখ ! এবার দশ লক্ষ বেশি না এগারো লাখ বেশি তুই বোঝ !"
"প্রশান্তদা , দেশ কোন অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে?"
" তা তোরা ওরকম নেতার পিছনে দৌড়োলে হবেই "
"দুই দেশই বোলো, ঋত্বিক বলেছিলেন আমি পুড়ছি , সবাই পুড়ছে , ব্রহ্মান্ড পুড়ছে \"
"ওটা ভাই চুল্লুর ঝোঁকে। আমেরিকা দিব্যটি আছে !"