Prashantada-19

দানাপুর প্যাসেঞ্জের এবং প্রশান্তদা

প্রশান্তদা হই হৈ করে ফোন করলেন ," কি রে তোদের জন্য তো আমেরিকায় মুখ দেখাতে পারছি না , ছৌ ছৌ ছৌ ! ছৌয়া ছৌয়া !"

"কেন কি হলো?'

"তোরা একটা চলচ্চিত্র বানিয়েছিস : টয়লেট--- আ লাভ স্টোরি ! সেই সিনেমার পোস্টারের নিচে একজন ভারতীয় রাস্তায় হিসি করছে ! ছি ছি !"

"তুমি কি করে দেখলে ?"

"নিজের চোখে দেখলুম রে , স্পষ্ট ছাপার অক্ষরে, নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ !"

"তুমি যা কিছু বের হয় ছাপার অক্ষরে তাই বিশ্বাস করো ? এইতো লিখেছে হিন্দুতে মুদ্রা ধোলাইয়ের আড়ত হলো নিউ ইয়র্ক। মেনে নেবে ?"

"আরে কোথায় নেতাজি আর কোথায় পেঁয়াজী , হিন্দুর সঙ্গে তুলনা করছিস নিউ ইয়র্ক টাইমস ?"

" তাহলে তুমি বলছো তোমার রাষ্ট্রপতি মিথ্যে কথা বলেন, উনি ফেকু?"

"কেন উনি ফেকু হবেন কেন ?"

"উনি তো প্রকাশ্যে একাধিকবার নিউ ইয়র্ক টাইমস কে ধিক্কার দিয়ে বলেছেন ওই সংবাদপত্রটি ভুয়ো খবরের ডিপো -ফেক নিউজ !"

"ওটা কথার কথা ! তাছাড়া ছবি ফেক হবে কি করে ?"

"কত কিছু হতে পারে ! ওই লোকটা যে ভারতীয় তার প্রমান কি ? এবং ভারতীয় হলেই যে তোমার মতো অনাবাসী ভারতীয় নয় সেটা মালুম হলো কি ভাবে? পাকিস্তানী হলেও অবাক হবো না ! নিউ ইয়র্ক টাইমসের ফটোবাবু পয়সা দিয়ে একজনকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করে থাকতে পারে! কত কি সম্ভব বোলো ? তুমি তাপসদার মতো "চনননগরের মাল" রাস্তায় হিসি করা জিন্দেগীতে দেখোনি কেয়া ? তাছাড়া ইকোনমিস্টের প্রবন্ধটা পাঠ করে তো তোমার হয়ে আমার মাথা হেঁট হয়ে গেলো দাদা !"

"আমার হয়ে? কি বলছিস ?"

"লিখেছে একটা করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় আর আমেরিকার এক শ্রেণীর লোক পুনর্বাসনের পয়সা লুট করে বড়োলোক হয়ে যায়! ছবি দিয়েছে একটা কালো চশমা পড়া ছিনতাইবাজ বন্যাদুর্গতদের মাথার উপর দাঁড়িয়ে লুট পাঠ চালাচ্ছে , ছি ছি ! যেই ঝড় বন্যা হলো -ধরো হ্যারিকেন ইরমা আর অমনি গরিবের হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দেয়া হলো?"

"তোরা আমেরিকার সমালোচনা করিস না ! খেতে পাচ্ছিস না আবার বুলেট ট্রেন ?'

"গরিব দেশ বটে , তবে মঙ্গলযান পাঠিয়েছে , স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে -প্রযুক্তিতে উন্নত হবে না কেন? গরুর গাড়ি চড়বো নাকি ? যখন মোবাইল ফোন এসেছিলো তখন কত সমালোচনার ঝড় , ষোলো টাকায় এক মিনিট , বড়লোকদের খেলনা ! মোবাইলের বিপ্লব ভারতে হলো কিনা ? চীন বেজিং থেকে সাংহাই , দেশের চার দিকে দাতং থেকে শিয়ান , বেজিং থেকে হারবিন -৪৫,০০০ কিলোমিটার হাই স্পিড ট্রেন চালাবে আর ভারত দানাপুর প্যাসেঞ্জেরের যুগে বসে থাকবে -বলো কি ? আমরাও ম্যাগলেভ আর হাইপার লুপ চালাবো গুরু -আমেরিকার মতো পিছিয়ে থাকবো না! এমনকি দিদিও বলেছে অন্ডাল থেকে শিয়ালদাহ বুলেট ট্রেন চলবে -ওটাকে শিলিগুড়ি থেকে শিয়ালদা করে দাও , দুর্গাপুরে একটা স্টপ !"

"এই টাকা দিয়ে কত গরিব ছেলে মেয়ের পড়াশুনো হতে পারতো ?"

"তোমরা জ্ঞান দিয়ো না , তোমাদের দারিদ্র নেই, গৃহহীন মানুষ নেই , বেকার যুবক নেই -তবে অস্ত্র সস্ত্রে এতো খরচ কেন ? কমরেডরা মহাচীনে বুলেট ট্রেন চালাবে , উত্তর কোরিয়া খেতে না পেয়েও পরমাণু বোমা ফাটাবে আর আমরা কিছু করলেই জনগণতান্ত্রিক জ্ঞান ? তার চেয়ে তোমরা বরং নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন একটা বুলেট ট্রেন চালু করো -তোমাদের এয়ারপোর্ট গুলোর হাল দেখলে দুঃখ হয় দাদা ! অন্যকে কাঠি না দিয়ে নিজের দেশের কাজে মন দাও ! ঈশ্বর তোমাদের মতো দাদাদের মঙ্গল করবেন !"